দিরাইয়ে কনে দেখতে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ১০ জন নিহত

ডেস্ক নিউজঃ
থাকেন সৌদি আরবে। দীর্ঘদিন থেকে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার এক তরুণীর সাথে তার প্রেম। দুই পরিবার থেকেও সম্মত ছিলেন। অপেক্ষা ছিলো কেবল দেশে ফেরার। দেশে ফিরলেই দুইটি প্রাণ এক হবে। দীর্ঘদিনের ভালবাসার শুভ প্রণয় হবে। কিন্তু না, দেশে ফিরেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন ইমন। তার সাথে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন বড় ভাই, বাবাসহ আরো ১০ স্বজন। দেশে ফিরে আংটি বদলে যাওয়ার পথেই লাশ হলেন হিমন। নারায়ণগঞ্জের পাগলা ফতুল্লাহ এলাকার ইমন লাশ হলেন হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের প্রাইভেট মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা লেগে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই নারীসহ ১০ জন নিহত হয়েছেন। এতে গুরুতর আহত ৫ জনকে আশংকাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১ শিশুসহ ২জন মারা যায়। আহত ৩ জনকে ্ওই হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের কান্দিগাঁও নামকস্থানে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রাইভেট মাইক্রোবাসটি সড়কের পার্শ¦বর্তী গাছের সাথে ধাক্কা লেগে দুমড়ে মুচড়ে গেলে ঘটনাস্থলে ৮জন মারা যায়। খবর পেয়ে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল হাসান, নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ^জিত কুমার পাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার ভোরে নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা পাগলা কুসুমপাড়া এলাকা থেকে সৌদি প্রবাসী ইমন খাঁন (২৬), তার পিতা, ভাই, ভাবি, বন্ধুসহ পরিবারের ১৩ জন সদস্য নিয়ে (হাইএস) মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো চ ১৯-৫৪৬২) যোগে পাত্রীকে আংটি পরানোর জন্য সিলেটের সুনামগঞ্জের দিরাই জগদল গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। পথিমধ্যে নবীগঞ্জের দিনারপুর অঞ্চলের দুর্ঘটনা কবলিত এলাকা হিসেবে পরিচিত কান্দিগাঁও নামকস্থানে পৌঁছামাত্র দ্রুতগামী প্রাইভেট মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের একটি বড় গাছের সাথে ধাক্কা লেগে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থলে নিহতরা হলেন, বর ইমন খাঁন (২৬), তার পিতা আব্বাস উদ্দিন খাঁন (৫০), তার ভাই রাব্বি খাঁন (২৩), মামাতো ভাই রাজিব আহমেদ (২৭), খালাতো ভাইয়ের বউ আসমা বেগম (২৮), গিয়াস উদ্দিন (৫১), বন্ধু মহসিন আহমেদ (২৫), ইমরান মিয়া (২৪)। পরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইমনের মামী সুমনা বেগম (২৮), ইমনের মামাতো বোন ও নিহত সুমনা বেগমের শিশু সন্তান খাদিজা আক্তার (৪) মারা গেছেন। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহতরা হলেন, রফিকুল ইসলাম (৫৫), আবুল হোসেন (৫০), গাড়ি চালক নাদিম মাহমুদ (৩৬)। তাদের আশংকাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে গোপলার বাজার তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ, শেরপুর হাইওয়ে থানার পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশগুলো উদ্ধার করে। পরে নিহতদের লাশ শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেলে নিহতদের আত্মীয়স্বজন শেরপুর হাইওয়ে থানাতে উপস্থিত হয়ে লাশ সনাক্ত করেন। এ সময় হবু বর ইমনের মামাতো ভাই আব্দুল আহাদ বলেন, নিহতরা একটি বিয়ের পাত্রী দেখার জন্য সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে যাচ্ছিলেন। কান্দিগাঁও জামে মসজিদের মুয়াজ্জিম আমীর আলী জানান, তিনি নামাজ পড়ে হাঁটাহাঁটি করছিলেন। এ সময় হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে দৌড়ে এসে দেখেন একটি মাইক্রোবাস গাছের সাথে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটেছে। কয়েকটি লাশ মাটিতে পড়ে আছে, ভিতরেও কয়েকজন লোক ছটফট করছিল। এ সময় তার শোর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে আহতদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। তিনি আরো বলেন, দুর্ঘটনার সময় অনেকের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বিচ্ছিন্ন্ন হয়ে যায়।
শেরপুর হাইওয়ে থানার ওসি এরশাদুল হক ভূইয়া জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌছে হতাহতদের উদ্ধার করে, পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। তিনি বলেন ঘটনাস্থলে ৮জন মারা যায়। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ২জন মারা যায়।
হবিগঞ্জ ফায়ার স্টেশনের ডিউটি অফিসার আইয়ুব বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নিহত ও আহতদের উদ্ধার করেছি।
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পাল জানান, মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অজ্ঞাতনামা ১জন মহিলা ও ৭জন পুরুষ ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। পরবর্তীতে  অবস্থায় আরো ২জন মারা যায়। হতাহতদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।