নিজস্ব প্রতিবেদক,দিশাডটকম ঃ- সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে জলমহালের দখলকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের দুই পক্ষের বন্দুক যুদ্ধে বহুল আলোচিত ট্রিপল মার্ডার মামলায় উপজেলা আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের ৫ নেতার বিরোদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হয়েছে। গত ৫ অক্টোবর সুনামগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (দিরাই) জোন থেকে পরোয়ানা আদেশটি জারি করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য র্যাব -৯ কে আদেশ প্রদান করেন ।পরোয়ানাভূক্ত আসামীরা হলেন দিরাই উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়, দিরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজুর রহমান তালুকদার, দিরাই পৌরসভার মেয়র ও দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ মিয়া, দুই ছেলে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক উজ্জল মিয়া ও তাসবির মিয়া।
মামলার বিবরনে জানা যায়,২০১৭ সালের সতের জানুয়ারী সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় কুলঞ্জ ইউনিয়নের জারলিয়া জলমহালের দখলকে নিয়ে আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের দুই পক্ষের বন্দুক যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন জেলে নিহত হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় চৌদ্দ মাস পর ২০১৮ সালের ১৪ এপ্রিল সিআইডি পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে । সিআইডির তদন্তে মামলার ৩৯ আসামির মধ্যে ১৪ জনের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা জহিরূল হক কবির। অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করেন মামলার বাদী যুবলীগ নেতা একরার হোসেন। সুনামগঞ্জের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (দিরাই) নারাজি আবেদনের শুনানী শেষে বিচারক মোহাম্মদ সাইফুর রহমান মজুমদার বাদীর আবেদনটি গ্রহন করে পিবিআইকে পূনঃতদন্ত রিপোর্টের নির্দেশ প্রদান করেন। প্রায় ৬ মাস পর পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সরওয়ারে জামান তদন্ত শেষে সুনামগঞ্জের আদালতে পূনঃতদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। পিবিআইয়ের তদন্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে বাদি একরার হোসেন আবারো নারাজি আবেদন করেন। এবছর ২১ অক্টোবর নারাজি আবেদনের শুনানীর দিন ধার্য করে আদালত।ঐদিন জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট দিরাই আদালত নারাজি আবেদনটি খারিজ করেন এবং মামলায় অস্থায়ী জামিনে থাকা সাত আসামীর মাঝে ছয় জন হাজির হয়ে স্থায়ী জামিনের আবেদন করেন। আদালতের বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরনের নির্দেশ দেন। তারা হলেন আওয়ামীলীগ নেতা কূলঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আহাদ মিয়া, আরিফুজ্জামান চৌধুরী এহিয়া,সাইফুল চৌধুরী, সোহেল চৌধুরী, লিপাস মিয়া ও আকুল মিয়া। এসব আসামীরা এর আগে ধৃত হয়ে জেল হাজতে থাকাবস্থায় আদালত থেকে অস্থায়ী জামিনে ছিলেন।এরপর বাদি জেলা দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করেন। দীর্ঘ শুনানী শেষে পূর্বের সকল আদেশ রদ ও রহিত করে গত ১০-০৮-২০২০ইং তারিখে বিজ্ঞ দায়রা জজ ওয়াহিদুজ্জামান শিকদার মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য র্যাবকে দায়িত্ব দিতে নিম্ন আদালতকে আদেশ প্রদান করেন। অভিযোগ পত্র গ্রহন না করে মামলাটি পুনঃতদন্ত করার জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেন আদালতের বিচারক । গত ৫ অক্টোবর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (দিরাই) জোন এর বিচারক শুভদীপ পাল কর্তৃক বহুল আলোচিত মামলার আসামী দিরাই উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়, দিরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজুর রহমান তালুকদার, দিরাই পৌরসভার মেয়র ও দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ মিয়া, দুই ছেলে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক উজ্জল মিয়া ও তাসবির মিয়ার বিরোদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য র্যাব -৯ কে আদেশ প্রদান করেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশটি দিরাই থানায় পৌঁছেছে বলে নিশ্চিত করেছেন থানা অফিসার ইনচার্জ আশরাফুল ইসলাম।উল্লেখ্য ২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারী সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় জলমহালের দখলকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের দুই পক্ষের বন্দুক যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন জেলে নিহত হয়। এ ঘটনায় দুই দিন পর যুবলীগ নেতা একরার হোসেন বাদি হয়ে ৩৯ জনের বিরোদ্ধে দিরাই থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। দিরাই থানার মামলা নং ৫-২০১৭ ইং।