হাওরের লুটেরা পাউবো’র এসও সমসের

স্টাফ  রির্পোটারঃ

টাকার পাগল সুনামগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের পওর ২ বিভাগের শাখা কর্মকর্তা শমসের আলী মন্টু।টাকা ছাড়া তিনি কিছুই বুঝেন না।হাওর রক্ষা বাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন থেকে শুরু করে প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানো, কাজের বিল ছাড়,অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহন সব কিছুই তিনি করেন টাকার বিনিময়ে।
এসও শমশের আলী মন্টু দীর্ঘ তিন বছর ধরে শাল্লার দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকে। নিয়োগ দিয়েছেন ব্যক্তিগত সহকারি।তার মাধ্যমেই নাকি লেনদেন করেন তিনি এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে পিআইসির লোকদের কাছ থেকে।
অনুসন্ধানে জানা যায় প্রকল্প পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে অনেকের কাছ থেকে অগ্রীম টাকাও নিয়েছেন তিনি।যারা প্রকল্প পেয়েছেন তাদের বরাদ্দ বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছেন এমন অভিযোগ অনেকের।তাছাড়া প্রতি বিলে তিনি টাকা নিতেন। টাকা ছাড়া কোন বিলে তিনি সাক্ষর করেন না।আর এসব টাকা তিনি লেনদেন করতেন তার ব্যক্তিগত সহকারির মাধ্য।তার ব্যক্তিগত সহকারিকে দ্বিতীয় এসও বলে শাল্লা উপজেলার সবাই চিনে।
এসও শমসের শাল্লা থেকে এসব টাকা কৃষি ব্যাংক এর মাধ্যমে ঢাকার একটি শাখায় নামে বেনামে টিটি করে পাঠাতেন।কখনও ব্যক্তিগত সহকারি আবার কখনও বিশ্বস্ত কোন পিআইসি কমিটির লোকের মাধ্যমে টিটি করতেন তিনি।
তাছাড়াও শাল্লা নদী খনন ও খাল খননের অনিয়মের অভিযোগ তার দিকে।

প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পিআইসি বন্টন করেছেন। এছাড়াও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পকে প্রয়োজনীয় বলে অনুমোদনও দিয়েছেন। শুধু তাই নয় টাকার বিনিময়ে কোনো কোনো পিআইসি’তে বরাদ্দও বেশি বেশি দিয়েছেন। অর্থাৎ ইষ্টিমেটে অতিরিক্ত অর্থ দেখিয়েছেন। অভিযোগ আছে কোনো কোনো পিআইসি টাকা না দেওয়ায় তাদের বরাদ্দ কম হয়েছে। এ ধরনের অনেক অভিযোগ রয়েছে সমসের আলী মন্ট’ুর বিরুদ্ধে। তবে বাঁধ নির্মাণে আগের ঠিকাদারি প্রথা বাতিল করে পিআইসি গঠন করায় লুটপাটের মহোৎসব বৃদ্ধি পেয়েছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে না নিয়ে প্রকৃত কৃষকদের দ্বারা পিআইসি গঠন করা হলে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ সঠিকভাবে হতো বলে মনে করেন সচেতন মহল।

২০১৯-২০ অর্থ বছরে শাল্লায় ১৩৭টি হাওররক্ষা বাঁধের নামে ২৪ কোটি টাকার বরাদ্দ আসে। প্রকল্প অনুমোদন থেকে শুরু করে ওয়ার্ক অর্ডার পর্যন্ত শাল্লার দায়িত্বে ছিলেন শাখা কর্মকর্তা সমসের আলী। এরমধ্যে জানতে পারেন সমসের আলীকে জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলায় বদলী করা হবে। সেই সুযোগে টাকার বিনিময়ে বেশির ভাগ প্রকল্পেই বরাদ্দের পরিমান বাড়িয়ে গেছেন তিনি। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে গত বছরের বাঁধ অক্ষত থাকলেও এবছর ২৪০ মিটারে ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। আবার কোনো কোনো ক্লোজারে ৬০০ মিটারে বরাদ্দের পরিমান ১০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ টাকা দিতে পারেনি বলে বরাদ্দের পরিমানও বাড়াতে পারেনি কিছু কিছু পিআইসির লোকেরা।
পাউবো সুত্রে জানা যায়, বরাম হাওর উপ-প্রকল্পে ১৪নং পিআইসি’র সভাপতি প্রানেশ চন্দ্র দাসের বাঁধে ১৯৮ মিটারে ১৬ লাখ ১১ হাজার ৬৪ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অথচ ইহা গত বছরের অক্ষত একটি বাঁধ। আবার একই হাওরের ১৩নং পিঅইসি’তে বরাদ্দ ৫১৬ মিটারে ১৬ লাখ ১৬ হাজার ৭শ ২৭ টাকা দেয়া হয়েছে। এই দুই বাঁধের কাজ একই রকম। আবার ১৫নং পিআইসি’র সভাপতি গুনেন্দ্র চন্দ্র দাসের ১৯৭ মিটারে বরাদ্দের পরিমান ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ১শ ৯৬ টাকা দেয়া হয়েছে। এই বাঁধটিও গত বছরের অক্ষত ছিল। শুধু এখানেই থেমে নয়, ভান্ডারবিল উপ-প্রকল্পের ১৯ নং পিআইসি’তে ২৩৩ মিটারে বরাদ্দের পরিমান ১৭ লাখ ৮১ হাজার ৩ টাকা। ওই বাঁধটি একজন রাজনৈতিক নেতার ছত্রছাঁয়ায় রয়েছে। যার ফলে বরাদ্দের পরিমানও বেশি। শুধু তাই নয় এ বাঁধে নীতিমালার তোয়াক্কা না করে দায়সাড়া ভাবে কাজ করছেন প্রকল্পের সভাপতি গনেশ দাস। যেখানে ২ ফুট পর পর দুরমুজ করার কথা রয়েছে সেখানে এসব কিছু না করেই তড়িগড়ি করে বাঁধের কাজ শেষের দিকে নেয়া হয়েছে। একই হাওরের ২৩নং পিআইসি’র ২৪০মিটারে বরাদ্দের পরিমান ২০লাখ ৫৩হাজার ১শ ৬৪ টাকা।এদিকে ২৭নং পিআইসি’র পুরো বাঁধই গত বছরের অক্ষত রয়েছে। তবে স্থানীয় এক সাংবাদিকের মুখ বন্ধ করতে ওই পিআইসি’তে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৯লাখ ৬৬হাজার ৬৪ টাকা।
ভেড়াডহর হাওরের ৪১নং প্রকল্পটি সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় বলে জানান এলাকাবাসি। তারা আরো জানান যে, ভরা বর্ষা মৌসুমে ওই প্রকল্প এলাকায় মোটর সাইকেল চলাচল করে। এ অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৮লাখ ৫৪ হাজার ৮শ ৮১ টাকা। ওই পিআিিস’র সভাপতি নরেশ অধিকারীর সাথে এসও শমসের আলীর সুসম্পর্ক থাকায় অপ্রয়োজনীয় বাঁধটি প্রয়োজনীয় বলে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অপরদিকে ছায়ার হাওরের ৯৮নং পিআইসি’র সভাপতি প্রদ্যুৎ দাস। তিনি উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা বিধুর দাসের ভাই হওয়ায় প্রকল্প এলাকায় জমি না থাকা সত্ত্বেও সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। ওই বাঁধটিও অপ্রয়োজনীয় বলে জানান মনুয়া গ্রামের কয়েকজন কৃষক। অথচ ৪৮০ মিটারে বরাদ্দ ১৫লাখ ১৩হাজার ১শ ৪৩ টাকা। উপজেলা জুড়ে সকল হাওরেই বরাদ্দের পরিমান নিয়ে রহস্যজনক ঘটনা তৈরি করেছেন এসও সমসের আলী মন্টু।

উপজেলার কান্দিগাও গ্রামের কৃষক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুস সাত্তার মিয়া বলেন, রক্ষক যেখানে ভক্ষন সেখানে আমরা সাধারণ কৃষক কি করবো ? হাওরের বরাদ্দের নামে হরিরলুট চলছে। প্রকৃত কৃষকদের পিআইসি না দিয়ে এসও’র মনোনীত ব্যাক্তিদেরকে পিআইসি দেয়া হয়েছে। আর টাকার বিনিময়ে পিআইসিদের বরাদ্দের পরিমানও বাড়িয়ে দিয়েছে এসও শমসের আলী মন্টু।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পিআইসি’র সভাপতি বলেন, উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা আমাদেরকে শুধু নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করার কথা বলেন। নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করার সুযোগই থাকে না। যেখানে বরাদ্দ দেয়া হয় ১২লাখ টাকা সেখানে ভাগ-বাটোয়ারা দিতে দিতে বরাদ্দের পরিমান চলে আসে ৮লাখ টাকায়। পিআইসি গঠন করার সময় এসও কে দেওয়া লাগে এক লাখ টাকা। এরপর প্রতিটি বিল উত্তোলনের সময় ৫০হাজার করে দিতে হয়। না হলে বিল উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। এধরনের চলতে থাকলে কোনো পিআইসি’র লোকেরাই সঠিকভাবে কাজ করতে পারবে না।

এ বিষয়ে শাল্লার সাবেক শাখা কর্মকর্তা ও উপ সহকারি প্রকৌশলী সমসের আলী মন্টুর মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগর চেেষ্টা করা হলেও তিিন ফোন রিসিভ করেন নি।

এব্যপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পওর-২) শফিকুল ইসলাম বলেন, শাল্লার হাওরের এসব বিষয়গুলো নিয়ে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময়ে মন্ত্রী মহোদয়ের সামনে স্থানীয় সাংবদিকরা তুলে ধরেছেন। এসব বিষয়গুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর যেগুলো অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প তা চিহ্নিত করে বাতিল করা হবে। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে আমাদের ব্যবস্থা নিতে সহজতর হবে।