বিশেষ প্রতিনিধি
‘১০ দিন আগে ঘরও পানি ওঠছিল, গরু-বাছুর লইয়া পাশের গাঁও মাইজবাড়ি’র আত্মীয় বাড়িত গিয়া ওঠছিলাম। পানি নামায়, ২ দিন অইছে ঘর পরিস্কার কইরা বাইচ্ছার বাপ আইয়া রাইত থাকঐন। আজকে (শুক্রবার) আরেকবার বারান্দাত (বারান্দায়) আইছে পানি। কিতা করতাম কইনছাইন। একতাতো করোনার লাগি কাম কাজ পাইরা না, অভাবের মাঝে খাইয়া না খাইয়া আছি। এর মাঝে ঘর পরিস্কারঔ করতাম পারছি না, আরবার ডুবি যার। বাঁচতাম কিলা।’ সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার নবীনগর উত্তরপাড়ার হতদরিদ্র হুসনা বেগম দুই দফা বন্যায় নিজেদের দুর্ভোগের কথা এভাবেই জানাচ্ছিলেন।
একেবারে পাশেই অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছল পরিবারের নূরে আলম বললেন, ‘ধনি-গরিব হকলেই যন্ত্রণাত আছে। ৫ দিন আগে ঘরের পানি নামছে, পাকা ঘর আছিল দেইক্কা একটু রক্ষা অইছিল। ঘর ছাইড়া পাশে আত্মীয়ের দোতলায় আছলাম। ঘরের জিনিষপত্র টাওয়াইতাম পারছি না, আরেকবার পানি বাড়ের, বারান্দার সিড়িত আইছে পানি। কিতা করতাম যে, করোনা-বন্যা কত কষ্ট বুঝানি যাইতো নায়। ইবারের বছরের লাখান বছর আর জীবনে আইছে না।’
শহরের নবীনগরের হুসনা বেগম কিংবা নূরে আলম কেবল এমন অবস্থার পড়েন নি। জেলার ১১ উপজেলার লাখো পরিবারে এমন দুর্দশা। আরও খারাপ অবস্থায় আছেন কেউ কেউ।
গেল মাসের ২৮-২৯ তারিখ থেকেই উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সুরমা নদীসহ জেলার নদীগুলোর পানি কূল উপচে হাওর-জলাশয় টইটুম্বুর করে লোকালয় প্লাবিত করায় জেলার ৮৭ ইউনিয়নের ৮৩ ইউনিয়ন এবং ৪ পৌরসভার ৩৬ ওয়ার্ডের ১৮ ওয়ার্ডের মানুষকে পানিবন্দি করেছিল। কোথাও ৫ দিন, কোথাওবা ৮ দিন দুর্ভোগ কাটিয়ে বাড়ি ফেরা শুরু করেছিলেন বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ।
শুক্রবার সকাল থেকে আবার শোনা যাচ্ছে বন্যার পদধ্বনি। শঙ্খিত লাখো মানুষ। নিচু এলাকার মানুষ আবারও গরু-বাছুর মালামালসহ নিরাপদ আশ্রয় খোঁজা শুরু করেছেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জানালেন, বন্যা কবলিতদের অনেকে ঘর পরিস্কারও করতে পারে নি। আবার সুরমা নদীর পানি শুক্রবার দুপুর ১২ টায় ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানেও বৃষ্টি অব্যাহত আছে। বিপদ মোকাবেলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বন্যা তথ্য কেন্দ্র সকাল থেকে চালু হয়েছে। ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পরিস্থিতি অবহিত করা হয়েছে।
দৈনিক দিরাই শাল্লা
৪:২২ অপরাহ্ণ