শাল্লায় বোরো চাষাবাদে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা

 

শাল্লা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি

নিম্নচাপ, অসময়ে বৃষ্টিপাত এবং কোনো কোনো স্থানে নদীর তলদেশ শুকিয়ে পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় শাল্লা উপজেলাসহ  সুনামগঞ্জ জেলার হাওর সংলগ্ন নদীর পানি কমছে না। এ কারণে এবার বোরো চাষাবাদ বিলম্বিত হতে পারে। কৃষকরা বলেছেন, চাষাবাদ বিলম্বিত হলে ধান পাকার মৌসুমে ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
জেলায় হাওর সংলগ্ন সবক’টি নদীর পানির উচ্চতা এখনো হাওরের তলদেশের অনেক উপরে। এ কারণে হাওরের পানি নিষ্কাশন বিলম্বিত হচ্ছে। জেলার বড় হাওরপাড়ের কৃষকরা এখনো বীজতলা তৈরির উদ্যোগ নেননি। পানি নিষ্কাশন বিলম্বিত হলে চাষাবাদ বিলম্বিত হবে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও ব্যাহত হতে পারে।
শাল্লার ছায়ার হাওরপাড়ের আনন্দপুর  গ্রামের কৃষক কালাই মিয়া ও বিকাশ চক্রবর্তী  বলেন, এখনো গবাদিপশু  বাঁধের উপরে রাখা রয়েছে, হাওরে থৈ থৈ পানি, কেউ এখনো বীজতলা  তৈরি করেনি।
এই হাওরপাড়ের উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান দিপু রঞ্জন দাস  বলেন, কার্তিক মাসে বৃষ্টি হওয়ায় নদীর পানি বেড়ে হাওরে পানি ঢুকেছে। হাওরের পানি বের হচ্ছে না।

নদীর পানি সামান্য কমেছে। আমরা এ বিষয়ে চিন্তা করছি- কি করা যায়। জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে চাষাবাদ বিলম্বিত হবে এবং ধান পাকার মৌসুমে অকাল বন্যাসহ নানাভাবে ফসল বিনষ্ট হতে পারে। তিনি জানান, গেল মৌসুমে এই সময়ে বীজতলায় ৩০ ভাগ বীজ বপনের কাজ শুরু হয়েছিল। এবার কেউ বীজতলায় হাতই দেয়নি।
উপজেলার মুক্তারপুর গ্রামের কৃষক রাজকুমার দাস বলেন, ‘কার্তিক মাসের চাঁন্দের (চাঁদের) মধ্যে বীজতলায় বীজ বপন করা হলে ভালো হয়। এরপর ৫-৬ সপ্তাহ পর রোয়া দিতে হবে। না হয় সময়মতো ধান পাকবে না। ধান অকাল বন্যাসহ নানাভাবে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।  হাওরের পাশের দাড়াই নদীতে পানি গত সপ্তাহে বেড়েছে, আগামী সপ্তাহ গেলে বোঝা যাবে কী হবে।’
জেলা কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. সফর উদ্দিন বলেন, আমি নতুন এসেছি, অফিসের রেকর্ড অনুযায়ী গত বছরের ৫ই নভেম্বর জেলার অনেক স্থানেই বীজ বপন হয়ে যায়। এবার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা বলেছেন, ৭ই নভেম্বর পর্যন্ত কোথাও বীজতলা তৈরিই হয়নি। তিনি জানান, কার্তিক মাসের শেষে বোরো’র বীজ বপন হয়। ৩৫ থেকে ৪০ দিন পর বোরো’র রোয়া শুরু হয়। এবার সুনামগঞ্জ জেলায় বোরো’র চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে দুই লাখ ১৯ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, গত ২৫শে অক্টোবর সুনামগঞ্জের নদীগুলোর পানির উচ্চতা ছিল ৪.৩০ মিটার। ২৬ থেকে ২৮শে অক্টোবর পর্যন্ত বৃষ্টি হওয়ায় পানির উচ্চতা বেড়ে হয় ৫.৫ মিটার। নদীতে পানি থাকায় হাওরের পানি নামছে না। তবে হাওরের পানির উচ্চতা কমেছে। প্রয়োজনে বাঁধ কাটা হবে, স্লুইসগেটগুলো দ্রুত ওঠিয়ে দেয়া হবে বলে তিনি জানান।