শাল্লায় বালু দিয়ে হাওর রক্ষাবাঁধ নির্মাণ কর্তৃপক্ষের নিরব ভূমিকা

 

শাল্লা প্রতিনিধি-
শাল্লা উপজেলায় নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই চলছে হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ। পিআইসিরা মনগড়া ভাবে কাজ করে ফসলকে রাখছে হুমকির মুখে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে বালি মাটি দিয়ে বাঁধের কাজ করা যাবে না। কিন্তু নীতিমালা না মেনেই শাল্লা উপজেলার ছাঁয়ার হাওরের অনেক বাঁধই বালুমাটি দিয়ে নির্মাণ করছে পিআইসি’র লোকজন। যা দেখেও নিরব কর্তৃপক্ষ অভিযোগ সংশ্লিষ্ট হাওরের কৃষকদের।
ছায়ার হাওর উপ-প্রকল্পের ১১১নং পিআইসি’র সরজমিনে দেখা যায়, বাঁধের কাজ বন্ধ রয়েছে। লোকজন নেই বাঁধে। এমসয় পিআইসি’র সভাপতি অনিল চন্দ্র দাসের মুঠোফোনে বাঁধের কাজ নিয়ে কথা বললে তিনি বলেন, আমার কাজ তো প্রায় শেষ। মাটি কাটা শেষ করেছি। এখন মিল করবো। আপনারা এসেছেন দেখে যান। আপনাদের যা লিখার লেখেন। নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখন অনেক দূর আছি, নীতিমালা কি জানি না। উপজেলার শ্রীহাইল গ্রামের নিকটবর্তী ১০৮নং পিআইসি। যার দৈর্ঘ্য ৫৮৬মিটার এবং বরাদ্দ ১৮লাখ ১হাজার ৫শ’ ৮৬টাকা। ওই প্রকল্পের প্রায় ৩০০মিটার স্থান অপ্রয়োজনীয় বলে জানান এলাকাবাসি। তারা আরো বলেন গত বছরের নদী খননের মাটিতেই ওই ৩০০মিটার স্থান উচু ভিটায় পরিণত হয়েছে। যার উপর দিয়ে পানি প্রবেশ করার কোনো সুযোগ নাই। তবে এবছর এসব অপ্রয়োজনীয় বাঁধের মাধ্যমেই লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সাবেক এস.ও সমসের আলী মন্টু।
অপরদিকে ১১২নং পিআইসিতে গিয়ে দেখা যায়, ৫/৭জন শ্রমিক বাঁধে কাজ করছেন। পিআইসি’র কোনো লোক বাঁধে নেই। সভাপতি রথীন্দ্র চন্দ্র দাসের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, অফিসের লোকজনই এসব বালি মাটি দিয়ে বাঁধ করা কথা বলেছেন। তাছাড়া আমরা ভালো মাটি পাবো কোথায়। এসব বালি মাটিই বাঁধের গোড়া থেকে কাটা হচ্ছে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাটি পাওয়া যায়না তাই কাটছি। বাঁধে সঠিক ভাবে দুরমুজ না করার বিষয়ে তিনি জানান, অফিস এসে বললে আবার দুরমুজ করবো। আপনারা কে ? বাঁধ আমার, আমি যেভাবে খুশি সেভাবে করবো।
ছায়ার হাওরের ১০৮, ১১১, ১১২ নং পিআইসি’র সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি বাঁধই সম্পূর্ণ বালিমাটিতে করা হচ্ছে। তাছাড়া কোনো বাঁধেই নেই স্ট্রাকচারাল প্রোফাইল, করা হচ্ছে না দুরমুজ। সঠিকভাবে দেয়া হয়নি বাঁধের স্লোভ, লাগানো হয়নি ঘাস বা ঢোল-কলমী। অথচ ১১১ ও ১১২ নং পিআইসি’র লোকজন অকপটে বলছেন বাঁধের কাজ শেষ।
একই হাওরের ১২২ নং পিআইসি’র বাঁধে গিয়ে দেখা যায়, বাঁধের গোড়া থেকেই মাটি কাটা হয়েছে। অনেকটা অগোছালো ভাবে মাটি ফেলে রাখা হয়েছে। বাঁধের কোথাও কোথাও রয়েছ কাদা মাটি। করা হচ্ছে না দুরমুজ ও অন্যান্য কাজ। এবিষয়ে জানতে পিআইসি’র সভাপতি আব্দুল হকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
অন্যদিকে, এ হাওরের ১০৮ নং পিআইসি থেকে শুরু করে ১২২ নং পিআইসি’র বাঁধ এলাকায় সারাদিন ঘুরে মনিটরিং ও তদারকি টীমের কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি। আর এ সুযোগেই পিআইসিরা নীতিমালা উপেক্ষা করে তাদের ইচ্ছা মতো কাজ করে হাজার হাজার কৃষকের ফসল হুমকিতে রাখছেন বলেও অভিমত এলাকাবাসির।
এব্যাপারে সুনামগঞ্জ পওর বিভাগ-২ এর শাখা কর্মকর্তা ও উপ-সহকারি প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল কাইয়ূমের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি গত মঙ্গলবার বাঁধ পরিদর্শন করেছি, পিআইসি’র লোকজনদেরকে বাঁধের কাজ সঠিকভাবে করতে বলেছি। পিআইসি’র লোকজন বালি মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মানে অফিসের যোগসাজসের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাই আমি এরূপ কথা কাউকে বলিনি। আমি এও বলছি, বালি মাটি দিয়ে বাঁধের কাজ নীতিমালা বিরোধী।
এবিষয়ে উপজেলা কাবিটা স্কীম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মোঃ আল মুক্তাদির হোসেনের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আচ্ছা টিক আছে, আপনারা আমাকে জানিয়েছেন। আমি নিজে ওইসব প্রকল্পগুলো দেখবো।