ক্রাইমজোন দিরাইয়ের ভাটিপাড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে খাস জমির দখল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় দুই দিনেও মামলা হয়নি। অকুস্থল পরিদর্শন করেছেন সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান ও দিরাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আশরাফুল ইসলাম। ময়না তদন্ত শেষে নিহত শাহ মুলুকের লাশ দাফন হয়েছে পঞ্চায়েতি কবরস্থানে। প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা, গবাদিপশুসহ আসবাবপত্র লুটপাটের বিস্তর অভিযোগ নিহতের স্বজনদের বিরুদ্ধে। শনিবার সকাল ৮ থেকে ১০টা পর্যন্ত উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের নুরনগর গ্রামে সামছুল হক ও পারুল তালুকদারের লোকদের মাঝে এ সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই সামছুল হক গ্রুপের শাহ মুলুক (৩০) নামে একজন নিহত। সে গ্রামের মৃত আব্দুস সালামের পুত্র। ইতিমধ্যে ভাটিপাড়া ইউনিয়নটিকে ক্রাইমজোন হিসেবে তালিকাভূক্ত করেছে আইনশৃংখলা বাহিনী।

সরেজমিন অকুস্থল দিরাই উপজেলার নূরনগর গ্রামে গিয়ে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের নুর নগর গ্রামের পাশে জামালগঞ্জ উপজেলার অধিনস্থ দুটি শামীপুর ও দোয়াপনি মৌজায় প্রায় ১০ একর খাস জমি দখল নিয়ে গ্রামের সামছুল হক ও পারুল তালুকদারের লোকদের মাঝে দীর্ঘদিনের বিরোধে মামলা মোকদ্দমা চলে আসছে। গত ছয় মাসে দুই পক্ষের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষ হয়। এনিয়ে স্থানীয় সালিশ ব্যক্তিরা একাধিকবার মীমাংসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। সর্বশেষ গত মাস খানেক আগে দিরাই উপজেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে দুই পক্ষকে নিয়ে মীমাংসা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দুই পক্ষ বৈঠকের সিদ্ধান্তে আপসে একমত হলেও অদৃশ্য ইশারায় কয়েকদিন পর আবারো বিরোধে লিপ্ত হয়।

অকুস্থল পরিদর্শনে আসা সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান এর কাছে নিহতের স্বজনরা জানান, গত বৃহস্পতিবার শামসুল ইসলামের পক্ষের সুরুজ আলীর পুত্র সাব্বিরকে মারধর করে পারুল তালুকদারের লোকজন। এর জের ধরেই দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শনিবার সকালে দুইপক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ২ ঘন্টাব্যাপী চলা এই সংঘর্ষে শামসুল ইসলামের পক্ষের শাহ মুল্লুক (৩০) ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। অপর পক্ষে পারুল তালুকদারের পক্ষের লোকদের অভিযোগ তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে মারামারির জের ধরে দুই দিন যাবত গ্রামে উত্তেজনা দেখা দিলে পাশের কয়েকটি গ্রামের সালিশি ব্যক্তিগন আপসের চেষ্টা চালান। এতে প্রতিপক্ষের লোকজন সম্মতি না দিয়ে শনিবার দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাদের উপর হামলা চালায়। পরে দুই পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের একজন নিহতের খবর পেয়ে পুলিশি গ্রেফতারের ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় পারুল তালুকদারের পক্ষের পুরুষেরা। বাড়িতে থাকা একাধিক মহিলা অভিযোগ করেন, পুরুষেরা পালিয়ে যাওয়ার সুযোগে প্রতিপক্ষের লোকজন তাদের বাড়িঘরে হামলা ও ভাংচুর চালায়। এসময় তারা গবাদিপশুসহ বসতঘরের আসবাবপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায়।

সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান জানান, সংঘর্ষে হতাহতের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দিরাই ও জামালগঞ্জ থানা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকা পরিদর্শন করেছি। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এখন পর্যন্ত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তিনজনকে আটক করা হয়েছে, বাকিদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।