শাল্লায় ১৪২ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন গিলে খাচ্ছে কুশিয়ারা

সুব্রত দাস খোকন:

আর কয়েক ফুট ভাঙলেই নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে শাল্লার প্রত্যন্ত জনপদের একটি স্বপ্নের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত শাল্লার নোয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখেন অপেক্ষাকৃত সুবিধাবঞ্চিত মানুষের গ্রাম নোয়াপাড়াবাসী। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলামিন চৌধুরী বলেন, কয়েকফুট ভাঙলেই, অর্থাৎ আগামীকালই স্কুলটি থাকবে কী-না, এই নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে এলাকাবাসীর। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ নিয়েও মানুষের সমালোচনা রয়েছে। স্থানীয় লোকজন বলেছেন, পাউবো’র স্থানীয় দায়িত্বশীলরা দায়সারা গোছের কাজ করছেন, তারা যেদিকে ভাঙছে, সেদিকে বস্তা না ফেলে যেদিকে বস্তা ফেলতে সুবিধা সেদিকে জিও ব্যাগ বা বালির বস্তা ফেলছেন।
কুশিয়ারার অব্যাহত ভাঙনে তিন বছরে বিলীন হয়ে গেছে শত বছরের পুরোনো নোয়াপাড়া গ্রাম। একই সঙ্গে হুমকিতে আছে গ্রামের শেষ চিহ্ন ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত নোয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি জানিয়ে এলেও ভাঙন রোধে ঠেকসই কোন কাজ হচ্ছে না।
শাল্লা উপজেলার দক্ষিণ দিকে এবং কুশিয়ারা নদীর উত্তর পাড়ে অবস্থিত প্রতাপপুর বাজার। বাজারের পূর্ব দিকে ছিল নোয়পাড়া গ্রাম এবং গ্রামের পূর্ব দিকের শেষ ভাগে অবস্থিত নোয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি ও কুশিয়ারা নদীর উত্তর পাড়ে অবস্থিত।
সরেজমিনে দেখা গেছে গ্রামের পশ্চিম পাশে ভাঙন শুরু হয়ে, ইতিমধ্যে নোয়াপাড়া গ্রামের দুই’শ বসতবাড়ি কুশিয়ারা নদীর ভাঙনে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গ্রামের পূর্ব দিকে অবস্থিত নোয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ চিহৃ হিসাবে গ্রামের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছিল। সেটিও বিলীন হবার পথে। ৩-৪ ফুট ভাঙলেই বিদ্যালয়ের ১৪২ শিক্ষার্থী ও ৫ শিক্ষকের স্বপ্ন ভেঙে নদীতে যাবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বললেন, নদীর পানি কমা শুরু হতেই ভাঙনও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এখনই যদি ভবন রক্ষায় ব্যবস্থা না হয়, তাহলে আগামী ১ সাপ্তাহের মধ্যে বিদ্যালয়
ভবনটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে গমন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
প্রতাপপুর বাজার ব্যবসায়ী তরুনী কান্ত দাস বলেন, চোখের সামনে পুরো গ্রামটি কুশিয়ারায় চলে গেল। বাজারও বিলীন হওয়ার উপক্রম। প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও নদীতে বিলীন হবার পথে। কর্তৃপক্ষ গত বছর কিছু জিও ব্যাগ ফেলেছিল, যেখানে ৫০০০ -৬০০০ ব্যাগ ফেলা প্রয়োজন, সেখানে ফেলা হয়েছে মাত্র ৬০০ ব্যাগ। এই জিও ব্যাগে কেবল কিছু টাকার অপচয় হয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে কোন কাজে আসে নি।
তিনি বললেন,‘এবারও কিছু ব্যাগ ফেলা হচ্ছে, আমরা বলি নদীর ¯্রােত যেখানে ঠেকে সেখানে ফেলতে, কিন্তু তারা ফেলে যেখানে ¯্রােত নেই সেখানে। তাই কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। নামকাওয়াস্তে কিছু ব্যাগ দেখিয়ে সরকারি টাকা মাইরা খাওয়ার ফন্দি করা হচ্ছে।’
নোয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ঋষিকেশ তালুকদার বলেন, বিদ্যালয়টি যেকোন মুহুর্তে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। আগামী দিনগুলিতে কোথায় শ্রেণিকার্যক্রম পরিচালনা হবে, তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছি।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দীন মোহাম্মদ জানান, গত বুধবার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার সরজমিনে বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছেন। করোনার জন্য এখন পাঠদান বন্ধ, পাঠদান শুরু হলে কোথায় কীভাবে পাঠদান করা হবে সেটি নির্ধারণ করতে হবে উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভায়।
পাউবো’র শাল্লা উপজেলা শাখার উপ:সহকারী প্রকৌশলী মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, নোয়াপাড়া গ্রাম, প্রতাপপুর বাজার ও নোয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রক্ষার জন্য বন্যার আগে ১২০০ জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। বন্যার কারণে কাজ করা যায় নি। এখন আবার ভাঙন শুরু হয়েছে, জিও ব্যাগও ফেরা হচ্ছে। আশাকরছি স্কুলটি রক্ষা করা যাবে।
শাল্লা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলামিন চৌধুরী বললেন, গ্রামের মানুষের অভিযোগের সত্যতা রয়েছে। যেখানে জিও ব্যাগ ফেললে ভাঙন রোধ হবে, সেখানে না ফেলে, তারা তাদের সুবিধাজনক স্থানে জিও ব্যাগ ফেলছে, এভাবে ভাঙন ঠেকানো কঠিন হবে। যেখানে জিও ব্যাগ ফেলা জরুরি সেখানে ফেলতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়টি রক্ষার্থে ভাঙনস্থলে একজন উপসহকারী প্রকৌশলীকে পাঠানো হয়েছে। ভাঙন রোধকল্পে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ভাঙন রোধ না হওয়া পর্যন্ত কাজ অব্যাহত থাকবে। নদীর পাড়ে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। এলাকার জনপ্রতিনিধি সচেতন গ্রামবাসীকে অনুরোধ করবো ঠিকাদারের কাছ থেকে শতভাগ কাজ আদায় করতে।