স্যার ফজলে হাসান আবেদকে আজীবন মনে রাখবে শাল্লাবাসী

ডেস্ক নিউজ;

স্বাধীন হওয়ার পর যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশের মানুষের জন্য সহায়তার হাত বাড়ান স্যার ফজলে হাসান আবেদ। এ সময় তিনি লন্ডনের বাড়ি বিক্রি করে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের মানুষের উন্নয়ন কার্যক্রমে সহায়তা করেন। সেই সুনামগঞ্জের শাল্লার যুদ্ধ-বিধ্বস্ত মানুষের সহায়তার মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয় ব্র্যাকের।

গত শুক্রবার রাতে সেই মানবতার হাত বাড়ানো স্যার ফজলে হাসান আবেদের মৃত্যুতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট যেন শাল্লার আনন্দপুরের বাসিন্দারা পেয়েছে। হঠাৎ করেই চলে যাওয়াকে মেনে নিতে পারছে না ওই গ্রামের মানুষ।

আনন্দপুরের গ্রামের রেনুবালা চক্রবর্তী বলেন, ফজলে হাসান আবেদের হাত ধরেই আমরা প্রশিক্ষণ নিয়েছি। নারীদের তিনি সব সময় সাহস দিয়েছেন। মেয়েরা ঘরে বসে থাকার জন্য নয়, এমন চিন্তাধারা ছিল তার। আজকে তার চলে যাওয়ায় আমরা অনেক কষ্ট পেয়েছি। শাল্লা আনন্দপুর থেকে ব্র্যাকের কাজ শুরু হয়। যুদ্ধের পর তিনি আমাদের জন্য স্রষ্টার পাঠানো দূত হিসেবে কাজ করেছেন। আমরা আনন্দপুরবাসী ফজলে হাসান আবেদকে কোনো দিন ভুলব না।

বীর মুক্তিযোদ্ধা অতুলকৃষ্ণ চক্রবর্তী বলেন, ব্র্যাকের উদ্বোধনের দিন আমি পটকা ফুটিয়েছিলাম। আমার এখনও মনে আছে। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত এলাকা হওয়ায় গ্রামে গ্রামে গিয়ে চিকিৎসা দিয়েছেন স্যার আবেদ। ফজলে হাসান আবেদ স্যার আমাদের জন্য অনেক করেছেন। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে কাজ করতে হয়। তিনি শাল্লার নারী-পুরুষ সবাইকে নিয়ে একত্রিত হয়ে কাজ করেছেন। শুধু শাল্লার আনন্দপুর নয় শ্যামারচর, সুখলাইনসহ শাল্লার সব অঞ্চলে চিকিৎসা সেবা, ত্রাণ বিতরণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম করে গিয়েছেন তিনি।

আনন্দপুরের রামানন্দ দাশ বলেন, যুদ্ধের পর তিনি আমাদের এখানে ফিতা কেটে ব্র্যাকের উদ্বোধন করেন। আমার দেখার মধ্যে একজন ভালো মানুষ ছিলেন তিনি। তিনি চলে গেছেন। আমরা তাকে কোনো দিন ভুলব না। তিনি আমাদের যুদ্ধ-বিধ্বস্ত গ্রামে যে মানবতার ব্রত নিয়ে এসেছিলেন, আজকে তার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান হয়েছে।

স্যার ফজলে হাসান আবেদ যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সুনামগঞ্জের শাল্লায় এসে যেমন মানুষের উপকার করেছিলেন, ঠিক তেমনি তিনি শাল্লায় বৃক্ষরোপণ করেছিলেন। আনন্দপুরে তার লাগানো শতাধিক গাছ এখনও তার অস্তিত্ব বহন করে।

স্যার ফজলে হাসান আবেদ সবার সঙ্গে বৈঠকে বসে খুব আগ্রহ করে প্রশিক্ষণ দিতেন বলেন জানান স্থানীয়রা। তার প্রধান উদ্যোগ ছিল যুদ্ধ-বিধ্বস্ত এই গ্রামের নারীদের শক্তিশালী করা। পুরুষের পাশাপাশি তিনি চাইতেন গ্রামের মেয়েরা যেন অন্যান্য কাজ করে। সেজন্য তিনি নারীদের একত্রিত করে সমিতি গঠন করে দিতেন। সমিতির টাকা দিয়ে মুরগি, গরু, ছাগল কিনে দিতেন। সেই গরু, ছাগল, মুরগি লালন-পালন করে গ্রামের নারীরা স্বাবলম্বী হতেন।

শাল্লার স্থানীয় সাংবাদিক জয়ন্ত সেন বলেন, তিনি আনন্দপুর গ্রামের ক্ষুদ্র ঋণের প্রচলন করেন। পরে ঘুঙ্গিয়ারগাঁও অফিস করেন, মার্কুলী ও শাসখাইও একটি শাখা তৈরি করে মানুষের পাশে দাঁড়ান। লোকমুখে শুনেছি আবেদ স্যার শাল্লা উপজেলার আনন্দপুর গ্রামে প্রথম ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন ১৯৭২ সালের শেষের দিকে। তিনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে প্রভূত উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। দুর্ভাগ্য আজ ব্র্যাকের সেই পরিপাটি জায়গাটি আজ ধ্বংসের মুখে। তার স্মৃতিটুকু ধরে রাখলে আমরা খুশি হতাম।

স্যার ফজলে হাসান আবেদ গত শুক্রবার রাত ৮টা ২৮ মিনিটে রাজধানীর বসুন্ধরার অ্যাপোলো হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তিনি স্ত্রী, এক মেয়ে, এক ছেলে এবং তিন নাতি-নাতনি রেখে গেছেন।

রোববার (২২ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তার মরদেহ ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টায় আর্মি স্টেডিয়ামেই নামাজে জানাজা সম্পন্ন হবে। জানাজা শেষে ঢাকার বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে