শাল্লায় ফসলরক্ষা বাঁধে প্রতারণার ফাঁদ

শাল্লা প্রতিনিধি:
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী শমসের আলী মন্টু। ২০১৭ সালের অকাল বন্যায় হাওর তলিয়ে যাওয়ার পর পরই শাখা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন শাল্লা উপজেলায়। তিনি যোগদান করেই ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে গড়ে তুলেন সিন্ডিকেট ঐক্য। এই সিন্ডিকেটের দিক নির্দেশনায় গঠন করতেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)। এতে পিআইসি’র সদস্যদের সাথে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ের জন্য নিয়োগ দেন একজন ব্যক্তিগত সহকারিও। এই সহকারির মাধ্যমে উপজেলার বিভিন্ন হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। এমনকি ভুয়া প্রাক্কলন (প্রাক্কলন) দেখিয়ে বরাদ্দ বাড়িয়েছেন অনেক প্রকল্পে। তবে অভিযোগ রয়েছে পিআইসিদের কাছ থেকে উৎকোচ আদায় করে এসব ভুয়া প্রাক্কলন তৈরি করেন এসও শমসের আলী মন্টু। এছাড়াও টাকার বিনিময়ে অপ্রয়োজনীয় বাঁধও প্রয়োজনীয় দেখিয়ে অনুমোদন করেছেন তিনি।
একাত্তরের কথার অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে শমসের আলীর ভুয়া প্রাক্কলনের চিত্র। দেখা গেছে ছাঁয়ার হাওর উপ-প্রকল্পের ১৩২ নং পিআইসির চেইনেজ ৫২.০৪০ হতে ৫২.১৩৬ পর্যন্ত ৯৬ মিটার স্থান দেখানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর চিত্রপট ভিন্ন। কল্যাণপুর বাজার ও মুসলিমপাড়া গ্রামের মধ্যে একটি ব্রিজের নিচে স্থানটি দেখানো হয়। যার দৈর্ঘ্য বাস্তবে ৩০ মিটারের উর্ধে নয়। শমসের আলী মন্টুর এমন প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন পিআইসির সদস্যরা। পিআইসি গঠন থেকে শুরু করে ওয়ার্ক অর্ডার পর্যন্ত শাল্লার দায়িত্বে ছিলেন। যার ফলে পিআইসিদের সাথে প্রতারণার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। অনুসন্ধানে এই দৃশ্যটি বেরিয়ে আসার পর পরই দায় এড়াতে চেষ্টা করছেন শাল্লার সংশ্লিষ্ট পওর বিভাগ। তাদের দাবী সার্ভে টিম এসব ভূল করেছে।
শুধু তাই নয়, ওই বাঁধের চেইনেজ ৫২.২১১ হতে ৫৩.২৭১ পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৬০ মিটার স্থানের দক্ষিণপাশে রয়েছে কল্যাণপুর, কুতুবপুর ও শিবপুর গ্রাম এবং এর পাশ দিয়ে উচু স্থানে রয়েছে সাবমারজেবল পাকা রাস্তা। তবে স্থানীয়রা জানান, মুসলিমপাড়া গ্রামের মধ্যে যে ৯৬ মিটার দেখানো হয়েছে তা ভুয়া প্রাক্কলন। এগুলো মুলত সরকারি টাকা লোপাটের ধান্দা।
একই হাওরের ৯৮নং পিআইসির চেইনেজ ১৮.৬০০ হতে ১৯.০২০ পর্যন্ত ৪৮০ মিটার স্থানে মনুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণপাশে প্রায় একশো মিটার স্থানে রয়েছে একটি ছোট ক্লোজার। আর বাকি ৩৮০ মিটার স্থানের পুর্বপাশে রয়েছে উঁচু কবর স্থান। অপরপাশে রয়েছে সাবমারজেবল রাস্তা। এখানো দেখা গেছে ভুয়া প্রাক্কলনের চিত্র।
এদিকে ভেড়াডহর হাওর উপ-প্রকল্পের চেইনেজ ১১.০০০ হতে ১১.৬৬০ পর্যন্ত ৬৬০ মিটার স্থানে বর্ষকালেও চলে মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন। এই সড়কটি মুলত আবোড়া সড়ক। এই অপ্রয়োজনীয় স্থানকে প্রয়োজনীয় দেখিয়ে বরাদ্দ দিয়েছেন সাড়ে ১৮ লাখ টাকার উপরে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাল্লার সাবেক উপ-সহকারি প্রকৌশলী শমসের আলী মন্টুর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি বলেন, এই জায়গায় ৩০ মিটারের বেশি হবে না এটা বাস্তব। তবে শাল্লায় প্রতিবছরই কোটি কোটি টাকা ফেরত যায়। সেই সুবাধে ফেরত না যাওয়ার জন্য এই প্রাক্কলন করা হয়েছে।
শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা স্কীম প্রনয়ন কমিটির সভাপতি আল মোক্তাদির হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও বক্তব্য দেয়া সম্ভব হয়নি। কারন তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এব্যাপারে সুনামগঞ্জ পওর-২ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, এগুলোতে উপজেলা কমিটি দেখার কথা। আর আমরা যেসব বাঁধে এরকম ভূল-ভ্রান্তি পাচ্ছি সেগুলো ঠিক করে নিচ্ছি।