নিজস্ব প্রতিবেদক দিশা ডটকম ঃ হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লা উপজেলা নিচু এলাকার শতাধিক গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।এরই মধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার পরিবার। দুই উপজেলার ৫ শতাধিক পরিবার পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়ের আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানগন। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দি মানুষগুলো। গেল সপ্তাহে কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়িঢলে দুই উপজেলা মাঝ দিয়ে বহমান কুশিয়ারা ও কালনী নদীর পানি বিপদসীমার ৩৫ সেঃমিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল।তবে গত দুই দিনে বৃষ্টি না হওয়ায় ধীরে ধীরে পানি কমতে থাকায় কিছুটা স্বস্থি ফিরেছে বানবাসিদের মাঝে।
দিরাই ও শাল্লা উপজেলা দূর্যোগ ও ত্রাণ অফিস সূত্রে জানা যায়, টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে হাওরের পানি উপচে বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দিরাই পৌর সদর ছাড়াও দুই উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামেই বন্যার পানি হাতছানি দিয়েছে। বানের পানিতে আক্রান্ত হয়েছে দুইশতাধিক মাছের খামার। পুকুর তলিয়ে ও স্রোতের টানে পুকুরের পাড় ভেঙ্গে প্রায় সোয়া কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দিরাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শরিফুল আলম জানান, এ পর্যন্ত বন্যায় ২০/২৫টি পুকুর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে আমরা মনে করছি,তবে সঠিক তথ্য এখনও নিরুপন করা সম্ভব হয়নি। শাল্লা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাসুদ জামান খান জানান, হাওরবেষ্টিত শাল্লা উপজেলায় ছোট বড় ৬২০ টি পুকুর রয়েছে। অধিকাংশ মৌসুমী পুকুর,এর মধ্যে ২০০টি পুকুর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যাচাই-বাচাই করে প্রায় ৮৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করা হয়েছে।দুই উপজেলার মৎস্য অফিসের তথ্যমতে প্রায় সোয়া কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে মৎস্য খামারীদের। দিরাই উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একরার হোসেন জানান, কুলঞ্জ ইউনিয়নের তেতৈয়া, হাতিয়া, আকিল নগর কুলঞ্জ,সুরিয়ারপাড়, তারাপাশা. টংগর রাড়ইলসহ বিভিন্ন গ্রামে বন্যার পানি উঠেছে। হাতিয়া উচ্চ বিদ্যালয়সহ কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্রে তিন শতাধিক পরিবার উঠেছে। জগদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ূন রশিদ লাবলু জানান, জগদল ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামেই বানের পানি উঠেছে। অধিকাংশ আক্রান্ত পরিবারের লোকজন তাদের গবাদিপশুগুলো নিয়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে উঠেছেন,এর মধ্যে পানিতে তলিয়ে যাওয়া বসতঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন ৩ শত পরিবার। শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউপির চেয়ারম্যান সুবল চন্দ্র দাস বলেন, কয়েকটি গ্রামের নিচু জায়গার বাড়িতে বন্যার পানি উঠেছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোকে সহযোগিতার জন্য তালিকা করা হযেছে। আশ্রয়কেন্দ্র অবস্থানকারিদের সরকারি ত্রানসাসগ্রী দেয়া হচ্ছে। দিরাই পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের উপজেলা সমন্ময়কারী এস এম মোনায়েম হোসেন বলেন কুশিয়ারা ও কালনী নদীর পানি বিপদসীমার ৩৫ সেঃমিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল।তবে গত দুই দিনে বৃষ্টি না হওয়ায় ধীরে ধীরে পানি কমতে থাকায় কিছুটা স্বস্থি ফিরেছে বানবাসিদের মাঝে।
দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান খোন্দকার জানান,দিরাই উপজেলার নিচু এলাকার বাড়িঘরে বন্যার পানি উঠেছে। ৬০ টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে চার হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে তাৎক্ষনিক সহযোগীতার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ ও প্রশাসন কাজ করছে।প্রতিদিন বন্যা কবলিত মানুষদের মাঝে সরকারি ত্রানসামগ্রী দেয়া হচ্ছে। শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আলা উদ্দিন বলেন,বন্যার পানিতে উপজেলার প্রতিটি গ্রামের লোকজন পানি বন্দি হয়েছেন। ১৩০ টি পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন।প্রতিদিনই সকল ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিগণকে সাথে নিয়ে বন্যার্থদের মাঝে পর্যাপÍ পরিমানে সরকারি ত্রানসামগ্রী বিতরন অব্যাহত রয়েছে। মনিটরিং সেলের মাধ্যমে বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।এদিকে সরকারি ত্রান সামগ্রীর পাশাপাশি বন্যাকবলিত বিভিন্ন গ্রাম এলাকা ও আশ্রয়কেন্দ্রে ব্যক্তি উদ্যোগে ও সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে শুকনো খাবারসহ ত্রানসামগ্রী বিতরন করতে দেখা যাচ্ছে।
দৈনিক দিরাই শাল্লা
৮:৫৯ অপরাহ্ণ