আ’ লীগ নেত্রীর পর্নোগ্রাফি মামলায় কলেজ অধ্যক্ষ ও সহোদর চেয়ারম্যান জেল হাজতে

নিজেস্ব  প্রতিবেদকঃ
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রীর দায়ের করা পর্নোগ্রাফি মামলায় বিবিয়ানা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ নৃপেন্দ্র চন্দ্র তালুকদার ও তার সহোদর নবীগঞ্জ উপজেলার বড় বাখৈর ইউপি চেয়ারম্যান রঙ্গলাল চন্দ্র তালুকদারকে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে। সোমবার সুনামগঞ্জ আদালতের চীপ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুর রহিম সহোদর দুই ভাইকে জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। দিরাই উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি রাজরানী চক্রবর্তীর পর্নোগ্রাফি মামলায় দিরাই উপজেলার ভাইটগাও গ্রামের নগেন্দ্র দাসের ছেলে আপন দুই ভাই দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন। সোমবার সকালে সুনামগঞ্জ আদালতের চীপ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে বিচারক আব্দুর রহিম নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ আদেশ দেন।

আদালত সুত্রে জানা যায় ২০২০ সালের আগষ্ট মাসে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা বিবিয়ানা মডেল কলেজের বহুল আলোচিত অধ্যক্ষ নৃপেন্দ্র চন্দ দাসের নিজস্ব ফেইসবুক আইডি থেকে আওয়ামিলীগ নেত্রী রাজরানী চক্রবর্তী সাথে ৮ মিনিট ৪ সেকেন্ডের অশ্লীল ভিডিও সামজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ঐদিন দুপুরের পর থেকে বিবিয়ানা কলেজ এলাকার বাসিন্দাদের একাধিক ফেসবুক আইডি হতে অধ্যক্ষের নানা অপকর্মের ফিরিস্তিসহ ভিডিওটি ব্যাপকভাবে ভাইরাল হতে থাকে । এর পর দেশ-বিদেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীরাসহ উপজেলার সর্বত্র তুমুল সমালোচনার ঝড় উঠে। সন্ধ্যা নাগাদ সচেতন মহলে নানা গুঞ্জনসহ অধ্যক্ষের অপসারণের দাবীতে মানববন্ধন করে এলাকাবাসী। একই ভাবে চেয়ারম্যান রঙ্গলাল দাস তার
এরপর রাজরানী চক্রবর্তী ও সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীর ছবি এডিট করে ফেইসবুকে পোষ্ট দেয়। পৃথক এ দুটি ঘটনায় দিরাই থানা লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও তৎকালীন ওসি গ্রহণ না করে আদালতে যেতে বলেন। পরে তিনি আদালতে পর্নোগ্রাফি আইনের ২০১২ এর ৮ (২)(৩) ধারায় পিটিশন মামলা দাখিল করেন। আদালতের নির্দেশে
দীর্ঘ তদন্ত শেষে জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি ১৮-১০-২১ তারিখে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর দুই আসামী দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। সোমবার সুনামগঞ্জ চীপ জুডিশিয়াল আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করেন। দুই পক্ষের আইনজীবীদের তর্ক বির্তকের পর বিচারক আব্দুর রহিম জামিন নামঞ্জুর করে আসামীদের জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুনামগঞ্জ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক পসিকিউর সোহেল আহমেদ। জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ ইকবাল বাহার নয়াদিগন্তকে বলেন, আদালতের নির্দেশ বাদীনির মামলাটি দীর্ঘ তদন্ত শেষে দুই আসামী অধ্যক্ষ নৃপেন্দ্র দাস ও তার ভাই চেয়ারম্যান রঙ্গলালের বিরুদ্ধে গত বছরের আঠারো অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করি।সোমবার দুই আসামী আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ আদেশ দেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দিরাই উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক ও কুলঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য রাজরানী চক্রবর্তীর সাথে ৭/৮ বছর পুর্বে অধ্যক্ষ নৃপেন্দ্র চন্দ্র তালুকদার এর পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে উঠে। ইউপি সদস্য থাকাকালীনই অধ্যক্ষের প্ররোচনায় স্বামীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয় রাজধানী চক্রবর্তীর। একপর্যায়ে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে সিলেট শহরে পাড়ি জমান তিনি। সেখানে বাসা ভাড়াসহ যাবতীয় খরচ বহন করেন নৃপেন্দ্র তালুকদার। তবে এই অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি সহজে মেনে নিতে পারেননি রাজরানীর স্বামী দুই সন্তানের জনক মধূসুদন চক্রবর্তী। স্বামী স্ত্রী দুজনেই মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়েন।

গত বছর স্ত্রী রাজরানী চক্রবর্তী কর্তৃক দায়ের করা নারী নির্যাতন মামলায় পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন হাজতবাস করেন তার স্বামী। এনিয়ে এলাকায় বিভিন্ন সময় একাধিক সালিশ বৈঠক হয়। বিষয়টি নিয়ে রাজরানীর স্বামী স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের কাছে বিচারপ্রার্থীও হন। কিন্ত সমাধান হয়নি।