নির্ধারিত সময় শেষ, আতঙ্কে কৃষক!

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২৮ ফেব্রুয়ারী ছিলো ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজের সর্বশেষ তারিখ। এবছর সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগ সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ৬টি হাওরে বাঁধ নির্মাণ মেরামত কাজ শুরু করে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর। উপজেলায় বাঁধ নির্মাণ মেরামত কাজের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করতে নানা অনিয়মের বিভিন্ন অভিযোগ নিয়েই কাজ শুরু করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। তাছাড়া বিভিন্ন সমস্যার কারণে সঠিক সময়ে কাজ শুরু করতে পারেনি উপজেলা কাবিটা স্কীম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটি। 

এাছাড়া হাওরের পানি কিছুটা দেরীতে নামায় বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করতে কিছুটা দেরী হয় বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগ। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে এর ভিন্ন চিত্রপট। ২৮ ফেব্রুয়ারী কাজ শেষের তারিখ পেরিয়ে গেলেও উদগলবিল হাওর উপ-প্রকল্পের ৩৭নং পিআইসি’তে দেখা যায় কাজ শুরুর নামমাত্র চিত্র।

অন্যদিকে ছায়ার হাওর উপ-প্রকল্পের ৮৮নং পিআইসি’র কাজটিও শুরু হয়েছে মাত্র দু’চার দিন আগে। অন্যদিকে বরাম হাওরের ১২নং পিআইসি’র বাঁধের মাটি গুলো এখনো অগোছালো ভাবে রাখা হয়েছে। দেখা যায়নি কোনো শ্রমিককে বাঁধে কাজ করতে।

উপজেলার সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে ও উপজেলার ওয়েবপোর্টাল মাধ্যম জানা যায়, এবছর উপজেলার ৬টি হাওরে মোট ১শ’ ৩৭টি প্রকল্প গৃহীত হয়। গৃহীত প্রকল্প গুলোর মধ্যে অনেক প্রকল্পই অপ্রয়োজনীয় বলে দাবি করছিলেন সচেতন মহল ও হাওরপাড়ের কৃষকরা। অন্যদিকে কোনো কোনো প্রকল্পে ভূল প্রাক্কলণেরও ইঙ্গিত পোষন করেছিলেন তারা। যা ইতিপূর্বে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশ হয়েছিল। তদুপরিও হাওরপাড়ের কৃষকদের দাবি ছিল নির্ধারিত সময়ে সঠিকভাবে বাঁধের কাজ শেষ করবে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর। কিন্তু তাতে ব্যর্থ হয় সংশ্লিষ্ট পওর বিভাগ ও সহযোগি সরকারি দপ্তর।

হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ/মেরামত কাজের সরকারি নীতিমালায় বাঁধের যাবতীয় কাজ ২৮ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে শেষ করার কথা বলা হয়। তার কারণ হিসেবে জানা যায়, ২৮ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করা হলে বাঁধগুলো টেকসই ও মজবুত হবে। অর্থাৎ মার্চের বৃষ্টি-বাদলে মাটির কাজ করা সম্ভব নয় বলেই ফেব্রুয়ারীর মধ্যে কাজ শেষ করার সময় নির্ধারিত হয়।

বাঁধের কাজের মান নিয়েও সচেতন কৃষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এবছর ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ বালি ও কাঁদা মাটি দিয়ে যেভাবে করা হচ্ছে, সামান্য বৃষ্টি হলেই তা ধসে যাবে। এছাড়াও তারা তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে আরো বলেন, দু’তিন বছর পর পর হাওরে অকাল বন্যা দেখা দেয়। গত দু’বছরের আগের মতো অবস্থা হলে এ বালি মাটির বাঁধে আমাদের ফসলরক্ষা হবে না।

এবছরের বাঁধ নির্মাণের সার্বিক দিক নিয়ে ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলনে’র শাল্লা উপজেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক তরুন কান্তি দাসের সাথে কথা হলে নির্ধারিত সময়ে বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন তিনি। সেই সাথে তিনি আরো বলেন, আমি নিজে উদগলবিল হাওরের ‘দাড়াইন বাজার হতে কাশিপুর শ্মশাণঘাট’ পর্যন্ত সামান্য পরিমাণ জমির জন্য ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯ ও ৩৯(ক) এই ৫টি প্রকল্পের কোনো প্রয়োজনই ছিল না। এখানে সরকারি অর্থের অপচয় করা হয়েছে।
নির্ধারিত সময়ে বাঁধের কাজ কতটুকু সসম্পন্ন হয়েছে জানতে সুনামগঞ্জ পওর-২ বিভাগের শাল্লা উপজেলার শাখা কর্মকর্তা ও উপ-সহকারি প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল কাইয়ূমের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি হাওর থেকে এইমাত্র এসেছি, আগামিকাল কাজের অগ্রগতি জানাতে পারবো। উদগলবিল হাওরের ৩৭নং পিআইসি’র বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, ওই পিআইসি’র সভাপতিকে উপজেলা কমিটির পক্ষ থেকে ৭দিনের সময় বেঁেধ দেয়া হয়েছে।

এবিষয়ে উপজেলা কাবিটা স্কীম প্রণয়ন-বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আল মুক্তাদির হোসেনের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ চলমান রয়েছে। এখনো পর্যন্ত কাজের সময় বাড়ানো হয়নি।