আগামী বাজেটে কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতকে অগ্রাধিকার

ডেেস্ক নিউজ ঃ
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান দুজনেই বলেছেন, আগামী বাজেটে কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাজেট তৈরি হবে। তারা বলেছেন, কাপড় ছোপড় আপাতত না হলেও চলবে, পেটে খাবার থাকতে হবে, এজন্য সবাই গুরুত্ব দিচ্ছে কৃষি খাতকে।
বুধবার বেলা ১১ টায় সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার সাংহাই হাওরে ধান কাটা কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে দুই মন্ত্রীই একই ধরণের মন্তব্য করেন।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমরা বর্তমানে দুটি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি, একটি কৃষি অন্যটি স্বাস্থ্য। মন্ত্রী বলেন, এই দুটির একটি আরেকটির পরিপূরক। কৃষি ছাড়া বাঁচা যাবে না। স্বাস্থ্য ছাড়াও বাঁচা যাবে না। আগামী দুই মাস পরের বাজেটে ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করার দুটি প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন করেছেন। কৃষিখাতে ১৯ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। কৃষিখাতকে মা’খাত আখ্যায়িত করে মন্ত্রী বলেন, এই খাত অগ্রাধিকার পাবে। কৃষিকে আধুনিকায়ন করা হবে। কৃষি শ্রমিকদের রোজগারের বিষয়টিও সরকারের নজড়ে রয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে সারা পৃথিবীর মানুষই আতঙ্কগ্রস্ত, উদ্বিগ্ন। অর্থনীতির উপর চরম স্থবিরতা নেমে এসেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে কৃষি উৎপাদনও এই সময়ে কমে যাবে, খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা বলছে অনেক দেশে দুর্ভিক্ষ হতে পারে। কাজেই ধান কেটে ঘরে আনা এই সময়ে হাওর এলাকায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশে প্রধান ফসল ধান। ধান তিনটি মৌসুমে হয়, আমন, বোরো ও আউশ। বোরোই বেশি উৎপাদন হয় আমাদের দেশে। প্রায় দুই কোটি টন অর্থাৎ উৎপাদিত ধানের ৬০ ভাগেরও বেশি বোরো ধান হয়। হাওর এলাকায় ৫ লাখ একর জমিতে বোরো ধান হয়। ২০ থেকে ২৫ লাখ টন ধান পাওয়া যায়। তবে হাওর এলাকার বোরো ধান খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আগাম বন্যায় বোরো ধান তলিয়ে নেবার দুঃখজনক অভিজ্ঞতা ২০১১ ও ২০১৭ সালে আমরা দেখেছি। এই ধান হারালে সারাদেশে উৎপাদনের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এজন্য হাওরের ধান কাটতে কৃষকদের সঙ্গে আমরা সকলেই সম্পৃক্ত হয়েছি। আমাদের সংগঠন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ ও ছাত্রলীগ সকল পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি তারা ধান কাটতে সম্পৃক্ত হয়েছে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি আমরা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই সময়ে ভিডিও কনফারেন্সে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়ায় বক্তৃতায় কৃষির উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। আমরা খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করেছি। বাংলাদেশ ছিল খাদ্য ঘাটতির দেশ। বন্যা, খড়া ও সাইক্লোনের আঘাত হানা এই দেশ এখন খাদ্য উদ্বৃত্বের দেশ। গত বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছিল। আমনের ফলনও ভাল হয়েছিল। এখন যে বোরো মাঠে আছে সেই ফসলও ভাল হয়েছে। হাওরাঞ্চলে ৬৫ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। সুনামগঞ্জে সবচেয়ে বেশি হাওর, গভীর হাওর এবং ঝুঁকিপূর্ণ হাওর। এই জেলায় ৭৫ ভাগেরও বেশি ধান ইতিমধ্যে কাটা হয়েছে।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে এবার শ্রমিক আসতে বাধা ছিল। প্রশাসনের সহযোগিতায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখানে শ্রমিক এসেছে। এই মূহূর্তে পুরো হাওর এলাকায় ৩ লাখ ২৫ হাজার শ্রমিক কাজ করছে। এই ধান কাটাকে ত্বরান্নিত করার জন্য কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দেওয়া হয়েছে। এখন ৪০০’এর বেশি হারভেস্টার এবং ৫০০ রিপার মেশিন হাওরে ধান কাটছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের পর সকলের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে অল্প সময়ে এতো বেশি ধান কাটা সম্ভব হয়েছে।
মাঠ থেকেই এখন পাইকাররা ৭০০ থেকে ৭৮০ দরে ধান কিনছে জানিয়ে তিনি বলেন, চাষীরা এবার খুশি। গত বছর চাষাবাদ করে কৃষকরা ক্ষুব্দ ছিলেন, ধানের দাম কম পাওয়ার কারণে এই বছর ২৭ তারিখ থেকে সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে ধান কেনা শুরু হয়েছে। সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে ধান ক্রয়ে কোন অনিয়ম হবে না, মধ্যস্বত্বভোগী থাকবে না, থাকার সুযোগও নেই। আমরা কৃষকদের তালিকা করে দিয়েছি, তালিকার উপরে লটারী হবে। লটারীতে এবার কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। অ্যাপসের মাধ্যমেও ২২ টি জেলা থেকে ধান কেনা হবে। সরকার এবার ৮ লাখ টন ধান কিনবে।
মন্ত্রী বলেন, আমরা কৃষিতে নানা ধরণের প্রণোদনা দেই। সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়। এই বছর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আউশের মৌসুমে এবং পাট চাষের জন্য আরও দেড়শ কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা দিয়েছেন। ৪ শতাংশ হারে এবার কৃষকদের ১৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে। ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে যেসব কৃষক মারা গেছেন তাদের পরিবারকে কমপক্ষে এক লাখ টাকা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এই সহায়তা আরও বেশিও হতে পারে।
গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, সুনামগঞ্জে ধান কেনা বাড়ানো যায় কী-না আগামীকালের (বৃহস্পতিবারের) সভায় উত্তাপন করবো আমি।
দুই মন্ত্রী এসময় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার শাড়ি ও লুঙ্গি কৃষকদের হাতে তুলে দেন। তাঁরা সাংহাই হাওরের একজন কৃষকের ধান কাটতেও সহায়তা করেন।
দুপুরে দুই মন্ত্রী সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লালপুরে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে এই জেলার অভ্যন্তরীণ বোরো সংগ্রহ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন মুহিবুর রহমান মানিক এমপি, ড. জয়া সেন গুপ্তা এমপি, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি, পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ্ এমপি, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি শামীমা শাহ্রিয়ার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন, কৃষি মন্ত্রনালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল, বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইননিস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাজাহান কবীর, জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আহাদ, পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখ্ত প্রমুখ।
পরে মন্ত্রীগণ তাহিরপুরের শনির হাওরের ধান কাটা পরিদর্শন করেন।