বর্ষায় কাজ নেই, হাওরবাসীর সময় কাটছে টিভি দেখা আর খেলাধুলায়

উবায়দুল হকঃ শুষ্ক মৌসুমে বোরো ধান তোলার পর বর্ষায় বেকার সময় পার করছেন দিরাইয়ের হাওর পারের মানুষ। হাওরের পানিতে মাছের দেখা না মেলায় বেকার হয়ে থাকতে হচ্ছে হাওরের বাসিন্দাদের। হাওর এলাকায় বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় গ্রামের বেকার লোকজন বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা আর টেলিভিশন দেখেই মূল্যবান সময় পার করছেন। ফলে বর্ষার পাঁচ মাস একেবারেই কাজ ছাড়া পার করতে হবে বলে জানান তারা। জানা যায়, বর্ষায় হাওরপারের ৮০ ভাগ মানুষই থাকে পানিবন্দি। গ্রামের কিছু কৃষক পরিবারের কর্তারা দলবদ্ধ হয়ে মাছ ধরে জীবিকার কাজ করতেন। এবছর হাওরের জলরাশিতে মাছ সেভাবে পাচ্ছেন না তারা। শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদে মহাব্যস্ত সময় পার করলেও বর্ষায় তাদের কোনো কাজ থাকে না। এসময় তারা কেরাম, ঘাফলাসহ বিভিন্ন খেলা, চায়ের দোকানে বসে আড্ডা আর সিডিতে ছবি দেখে সময় পার করেন তারা।
বিকালের পর থেকেই ভাসমান দ্বীপসদৃশ্য গ্রামগুলোর ছোট ছোট বাজারে ও আশপাশে খোলা জায়গায় বসে আড্ডা।
হাওরের বাসিন্দারা জানান, হাওরের মানুষের ব্যস্ত সময় কাটে কার্তিক মাস থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত। এ সময়টাতে জমিতে ধান রোপণ, জমির পরিচর্যা ও ধান কেটে শুকিয়ে বাড়ির না। গোলায় তুলতে ফুসরত মেলে না। এ সাত মাস সূর্য উদয় থেক সূর্যাস্ত
যাওয়া পর্যন্ত পরিশ্রম আর ব্যস্ততা ঘিরে রাখে হাওরবাসীকে। কিন্তু ঘরে ধান তোলা শেষ হওয়া মাত্রই বেকার হয়ে যায় তারা। এ সময় তারা মাছ শিকার করে থাকেন। কিন্তু এ বছর মাছও তেমন পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান তারা।
রফিনগর ইউনিয়নের বলনপুর গ্রামের জেলে অমর সরকার জানান, ‘নদীতে মাছ নাই, জাল বাইব কেমনে’। তাই আমাদের বেকার সময় পার করতে হচ্ছে। লুডু- প্লেকার্ড খেলে সময়টা কাটাই ।
কুলঞ্জ ইউনিয়নের আকিলশাহ বাজারে চায়ের দোকানে বসে থাকা একাধিক ব্যক্তির সাথে আলাপকালে তারা বলেন, ‘ঘরে বসে বসে দিনটা তো যায়।
তাই চায়ের দোকানে সিডিতে সিনেমা দেখেই সময় কাটাই।’
দিরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম চৌধুরী বলেন, হাওরের মানুষ শুষ্ক মৌসুমে ক্ষেত খামারি করে জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু বর্ষা হলে বেকার হয়ে পড়েন। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে হাওরবাসীর জন্য যা করা যায় তাই করা হবে। তিনি আরও বলেন, হাওরাঞ্চলের নারীরা হস্তশিল্পে পারদর্শী, আধুনিক ও উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে হাঁস ও মুরগি লালন-পালনের সঙ্গে যুক্ত করা গেলে বেকার নারীসমাজ স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন। উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসের সহকারী কর্মকর্তা জাহির রায়হান বলেন, চলতি বছরে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর বেকার যুবক-যুবতীদের স্বাবলম্বী করতে প্রশিক্ষণ কোর্স গ্রহণ করেছে।